তারাগঞ্জ (রংপুর) সংবাদদাতাঃ- রংপুরের তারাগঞ্জে এক নারীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে স্বামী ও ননদকে গ্রেপ্তার করেছেন পুলিশ। হত্যা নাকী আত্মহত্যা তা নিয়ে শুরু হয়েছে এলাকায় নানান জল্পনা-কল্পনা। নিহত ওই নারী তারাগঞ্জ থানা সংলগ্ন মাছুয়াপাড়া গ্রামের ভ্যান চালক স্বপন চন্দ্র রায়ের স্ত্রী ও দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার তাজনগর এলাকার মৃত ভবেশ চন্দ্র রায়ের মেয়ে সুজাতা রানী রায় (২৫)। নিহিত সুজাতার ভাই সুশান্ত তার বোনকে হত্যা করা হয়েছে বলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। সুজাতার স্বামী সপন চন্দ্র রায় (৩০) ও তার ননদ দূলমালা রাণী (৩৫) গ্রেপ্তার করেজেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে ।
মৃতের স্বজন সূত্রে জানা যায়, রংপুরের তারাগঞ্জ থানা সংলগ্ন মাছুয়াপাড়া গ্রামের বাড়িয়া চন্দ্রের ছেলে স্বপন চন্দ্র রায়ের সাথে প্রায় ১২-১৩ বছর আগে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় সুজাতার। তাদের কোল জুরে আসে তিন সন্তান। বড় মেয়ে স্মৃতি চতুর্থ শ্রেণী ও একমাত্র ছেলে সৌরভ রায় তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ছোট মেয়ে বিথী রানী মাত্র ১ বছরের কন্যা সন্তান। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকসহ নানান কারণে সুজাতাকে মারধর করে আসতো স্বপনসহ তার পরিবারের স্বজনরা। সোমবারেও অজানা কারণে সুজাতাকে বেদম পেটান স্বপন। মঙ্গলবার দুপুরে স্বপনের প্রতিবেশীর কাছে সুজাতার মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে আসেন সুজাতার মা, মাসি, বোনসহ কয়েকজন নিকটাত্মীয়।
তথ্য সংগ্রহের কাজে তারাগঞ্জ থানা চত্বরে গিয়ে দেখা যায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। থানার সামনে ভ্যানে শোয়া রয়েছে মা সুজাতার লাশ। সেখানে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন রংপুরের একটি সিআইডি টিম। বাবা স্বপন চন্দ্র রায়কেথানার ভিতরে আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে । একবার থানার ভিতর ও একবার থানা চত্বরে কেদে ছুটে চলেছে শিশু কন্যা স্মৃতি রানী রায়। আহাজারি করে ওসি স্যারকে শিশু স্মৃতি বলছে, স্যার মাকে হারিয়েছি। বাবাকেও হারাতে চাই না। আপনে মোর বাবাক ছাড়ি দেন। মাও তো হামাক ছাড়ি চলি গেইছে, বাপোক যদি তোমরা ছাড়ি না দেন তাইলে হামরা কার কাছোত যামো। কায় হামাক ভাত দিবে স্যার। কার সাথে হামা নিন (ঘুম) যামো। মোর বাপোক ছাড়ি দেও স্যার।স্যার মাকে হারিয়েছি। বাবাকেও হারাতে চাই না বলে থানা চত্বরে উচ্চ গলায় কাদছে শিশু কন্যা স্মৃতি রানী রায়।
তারাগঞ্জ থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল আনুমানিক ১১টায় স্থানীয় লোকজনের কাছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তারাগঞ্জ থানার একদল পুলিশ। স্বপন ও সুজাতার শোবার ঘরে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।
এরপর সিআইডি টিমকে জানালে রংপুরের একটি সিআইডি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করে। লাশের প্রাথমিক সুরতহাল শেষে আনুমানিক বিকাল প্রায় সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ থানায় নিয়ে আসে সুজাতার লাশ। ঘটনাস্থল থেকে সুজাতার স্বামী স্বপন চন্দ্র রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসে থানা পুলিশ।
তারাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ফারুক আহম্মেদ বলেন, লোক মারফত খবর পেয়ে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক সুরতহালে লাশের দুই বাহুতে মারধরের কালো দাগ ও গলায় কালো দাগ পাওয়া গেছে। নিহিত সুজাতার ভাই সুশান্ত তার বোনকে হত্যা করা হয়েছে বলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। সুজাতার স্বামী সপন ও তার ননদকে গ্রেপ্তার করেজেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে । ২য় মার্চ ময়না তদন্তের জন্য লাশটিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।
Leave a Reply