মোঃ আবু শহীদ,ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:- দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে চাল সংগ্রহে আশার মুখ দেখলেও মুখ থুবড়ে পড়েছে ধান সংগ্রহ। গত দুই মাসে সরকারিভাবে ৩ হাজার ৪৯৮ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হলেও ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৬ মেট্রিক টন। ফলে চাল সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জিত হলেও ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়ে শংঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক নাসিম আর আকতার জানান, ফুলবাড়ী উপজেলায় দু’টি সরকারি খাদ্য গুদামে সরকারিভাবে অভ্যন্তরীণ আমন মৌসুমে ৪০ টাকা কেজি দরে মিলারদের নিকট থেকে ৩ হাজার ৯৪৪ মেট্রিক টন চাল এবং ২৭ টাকা কেজি দরে সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে এক হাজার মেট্রিক টন ধান ক্রয় করার লক্ষ্যে গত বছরের ২৩ নভেম্বর থেকে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করা হয়। উপজেলায় ১৫২ জন মিলারের মধ্য থেকে ১৪০ জন মিলার সরকারি খাদ্য গুদামে চাল দেওয়ার অনুমোদন পেয়েছেন। মিলারদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, উদ্বোধনের দিন থেকে এ পর্যন্ত গত দুই মাসে দু’টি সরকারি খাদ্য গুদামে ৩ হাজার ৪৯৮.৩৫ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। আর কৃষকদের নিকট থেকে ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৬ মেট্রিক টন। আগামী ২৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের নির্ধারিত সময় রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত আমন চাষ মৌসুমে ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ছিল ৭৭ হাজার ৭৬১ মেট্রিক টন ধানে যা চালে ৫১ হাজার ৮৪১ মেট্রিক টন। উপজেলায় কার্ডধারী কৃষকের সংখ্যা ৩২ হাজার ৫৫০ জন। এর মধ্যে সরকারি গুদামে চাল দেওয়ার জন্য লটারির মাধ্যমে ৬৫০ জন কৃষক আবেদন করার সুযোগ পায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ে মিলারদের নিকট থেকে চাল সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জিত হলেও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে স্থানীয় বাজারে দেড় থেকে দুই শ’ টাকা ধানের দাম বেশি পাওয়ায় সরকারি খাদ্যগুদামে ধান দিচ্ছেননা কৃষকরা। ফলে সরকারীভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান মুখ থুবড়ে পড়েছে।
এদিকে কৃষকরা বলছেন,সরকার ২৭ টাকা কেজি দরে ধানের দাম নির্ধারণ করেছে। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে স্থানীয় বাজারে মন প্রতি দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা ধানের দাম বেশি । একইসাথে সরকারি গুদামে ধান দিতে গেলে ১৪ শতাংশ ময়েশ্চারাইজার বা আর্দ্রতা লাগে এবং গুদামে ধান ঢুকাতেও নানা ঝামেলা। অথচ ওই ধান বাজারে দাম বেশি ময়েশ্চারাইজার মাপার ঝামেলা নেই তাই বাজারেই ধান বিক্রি করছেন তারা।
ফুলবাড়ী উপজেলা ধান-চাল মিল মালিক সমিতির আহবায়ক প্রভাষক মোঃ মঞ্জির মোরশেদ বলেন, সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, উপজেলার মিলাররা খাদ্যগুদামে চাল দিচ্ছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চাল সরবরাহ সম্পন্ন করা হবে বলে আশা করছেন তিনি। মিলাররা যেহেতু সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ তাই লোকসান হলেও মিলাররা সরকারি গুদামে চাল দিতে বাধ্য। কৃষকরা বাজারে ধানের দাম বেশী পাওয়ায় সরকারী গুদামে ঝামেলায় যেতে চাননা।
ফুলবাড়ী খাদ্য গুদাম ও উপজেলার মাদিলা খাদ্য গুদামের খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অনিমেষ সরকার ও মাহমুদ মোঃ এমরান জানান, আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। তবে বাজারে ধানের দাম পাওয়ায় গুদামে ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা কম।
ফুলবাড়ী উপজেলা ধান-চাল ক্রয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ রিয়াজ উদ্দিন বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চাল সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে। কিন্তু বাজারে ধানের দাম বেশি পাওয়ায় খাদ্যগুদামে ধান দিচ্ছেন না কৃষকরা।
Leave a Reply